টাইফয়েড টিকা রেজিস্ট্রেশন করার নিয়ম | টাইফয়েড টিকা নিবন্ধন ২০২৫
কল্পনা করুন এক গ্লাস পানি খেলেন আর তার ভেতর লুকিয়ে থাকা ব্যাকটেরিয়ার কারণে আপনি আক্রান্ত হলেন টাইফয়েডে। এই রোগ শুধু দুর্বলই করে না, অনেক সময় প্রাণঘাতীও হতে পারে। কিন্তু চিন্তার কিছু নেই আধুনিক ভ্যাকসিন এখন আমাদের হাতের নাগালে।
বাংলাদেশ সরকার আগামী ১২ই অক্টোবর ২০২৫ থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় টাইফয়েড টিকা কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। অর্থাৎ এখনই সময় সঠিকভাবে টাইফয়েড টিকা রেজিস্ট্রেশন করে টিকা নেওয়ার।
শুধু সহজ কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করলেই আপনি টাইফয়েড টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। আপনি কি জানেন, প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়?
আগেরবার করোনার টিকার প্রভাবে চুলকানির একটা সমস্যার কথা শুনা যাচ্ছিল তবে এই টিকায় এমন ক্ষতিকারক কিছু নেই। তাই টাইফয়েড এড়িয়ে চলতে টিকা নিন, সুস্থ থাকুন এবং পরিবারকে সুরক্ষিত রাখুন। টিকা গ্রহনের পূর্বে এবং পরে বেশ কিছু করনীয় আছে, বিস্তারিত বলে দেওয়া আছে শেষে।
টাইফয়েড টিকা রেজিস্ট্রেশন করার নিয়ম
টাইফয়েড টিকার নিবন্ধন অনলাইন এবং অফলাইন এই দুইভাবে করা যায়। অনলাইনে VaxEPI ওয়েবসাইট থেকে এবং অফলাইনে যেকোনো উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কিংবা সিটি কর্পোরেশন অফিসে।
তবে এখন অনলাইনেই আবেদন করা যাচ্ছে ফলে ঝামেলার কোন কারন নেই। রেজিস্ট্রেশন করতে নিচের ধাপগুলো অনুসরন করতে হবে। তবে না বুঝলেও সমস্যা নেই এখানে ধাপে ধাপে বিস্তারিত আলোচনা করা আছে। প্রথমে টাইফয়েড টিকা রেজিস্ট্রেশন এর ০৫টি ধাপ দেখে নেওয়া যাক।
- সরকারি টিকা রেজিস্ট্রেশন ওয়েবসাইট বা অ্যাপে প্রবেশ করুন।
- জন্ম নিবন্ধনের তথ্য দিন।
- মোবাইল নাম্বার ও ঠিকানা দিয়ে ফর্ম পূরণ করুন।
- কনফার্মেশন মেসেজ (OTP) আসবে তা দিয়ে কনফার্ম করুন।
- নির্দিষ্ট তারিখ ও স্থানে গিয়ে টিকা নিন।
প্রথম ধাপ- সরকারি টিকা ওয়েবসাইটে প্রবেশ
প্রথমে ইপিয়াই (EPI) ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। হাতের কাছে থাকা মোবাইল কিংবা কম্পিউটার থেকে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন https://www.vaxepi.gov.bd/registration/tcv
এই সাইটে প্রবেশ করার পর নিচের ছবির মত একটি পেজ চলে আসবে। এখানে লেখা থাকবে “টাইফয়েড ভ্যাকসিনের জন্য রেজিস্ট্রেশন করুন” এখানে আবেদনকারীর বিস্তারিত তথ্য প্রদান করতে হবে।
দ্বিতীয় ধাপ- জন্ম নিবন্ধনের তথ্য দিন
এইধাপে আবেদনকারীর জন্ম তারিখ, জন্ম নিবন্ধন সনদের নাম্বার দিতে তবে। তারপর ছেলে নাকি মেয়ে তা সিলেক্ট করে দিতে হবে। সর্বশেষ স্কিনে থাকা কাপচা কোডটি লিখতে হবে। ক্যাপচা কোড পুরনের পর যাচাই করুন বাটনে ক্লিক করতে হবে।
তবে মনে রাখতে হবে এখানে শুধুমাত্র ১৭ সংখ্যার জন্ম সনদ দিয়ে আবেদন করা যাবে। আবেদনকারির জন্ম সনদ ১৭ সংখ্যার কম হলে বুঝতে হবে এটা অনলাইন করা নেই। তবে চিন্তার কারন নেই। জেনে নিন জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করার নিয়ম
তৃতীয় ধাপ- মোবাইল নাম্বার ও ঠিকানা তথ্য প্রদান
এই ধাপে একটি সচল মোবাইল নাম্বার প্রদান করতে হবে। তারপর একটি ইমেইল এবং বর্তমান ঠিকানার তথ্য প্রদান করতে হবে। নিচের ছবিটি খেয়াল করলে বিস্তারিত বুঝতে পারা যাবে।
প্রথমে একটি মোবাইল নাম্বার দিন,তারপর একটি ইমেইল দেন। এখন বর্তমান ঠিকানার তথ্য দিন ( যে ঠিকানায় বর্তমানে বসবাস করছেন)। এখানে যে যে তথ্যের প্রয়োজন হবে তা হচ্ছেঃ
- বর্তমান বসবাসকারী বিভাগ সিলেক্ট করুন
- জেলা সিলেক্ট করুন
- থানা সিলেক্ট করুন
- ইউনিয়ন সিলেক্ট করুন
- ওয়ার্ড সিলেক্ট করুন
- গ্রাম/মহল্লা সিলেক্ট করুন এবং
- সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন
চতুর্থ ধাপ- মোবাইল নাম্বার ভেরিফিকেশন
তারপর নিবন্ধিত মোবাইল নাম্বারে একটি OTP যাবে। মোবাইলের ম্যাসেজ অপশন থেকে ০৪ সংখ্যার অটিপি টি টাইপ করে লিখুন এবং সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন। তবে সাথে সাথে কোড না আসলে ৫ মিনিট অপেক্ষা করতে পারেন। তবুও যদি না আসে তবে “পুনরায় ওটিপি পাঠান” বাটনে ক্লিক করুন।
পঞ্চম ধাপ- টাইফয়েড ভ্যাকসিন নিবন্ধন
এইবার আপনার সামনে একটি নতুন ড্যাশবোর্ড চলে আসবে সেখানে দুইটি অপশন চলে আসবে। পাশাপাশি লেখা থাকবে যে , ভ্যাক্স ইপিআই পোর্টালে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়েছে। অপশন দুইটি হলঃ
- টাইফয়েড টিকা রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন
- মেনিনজাইটিস টিকা নিবন্ধন
এখান থেকে যাদের পাসপোর্ট আছে তারাই কেমন মেনিনজাইটিস টিকার রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। ত যাই হোক এবার টাইফয়েড টিকা নিবন্ধন এ ক্লিক করতে হবে।
ষষ্ঠ ধাপ- টাইফয়েড টিকা নিবন্ধন ধরন সিলেকশন
এই ধাপে দুইটি অপশন চলে আসবে। যাদের বয়স নয় মাস (০৯) এর বেশি কিন্তু ১৫ বছরের কম এবং যারা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে না।
আর একটি অপশন হচ্ছে যাদের বয়স ০৯ মাসের বেশি এবং কোন না কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে। ত আপনার সন্তান যদি পড়াশোনা করে তবে নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টিকা নিতে পারবে।
সপ্তম ধাপ- টিকাদানের স্থান নির্বাচন
টাইফয়েড টিকা রেজিস্ট্রেশন এর এটি সর্বশেষ ধাপ। এই ধাপে টিকা গ্রহনের স্থান সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এখানে বেশ কিছু তথ্য প্রদান করতে হবে। যেমন
- আবেদনকারীর বিভাগের নাম
- জেলার ও থানার নাম
- পৌরসভার নাম (যদি থাকে)
- ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন সিলেক্ট
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম এবং
- কোন শ্রেনিতে অধ্যায়ন করছে তার তথ্য
এই সকল তথ্য পুরন করা হয়ে গেলে সাবমিট বাটনে ক্লিক করতে হবে এবং টাইফয়েড টিকার ভ্যাকসিন কার্ড সংগ্রহ করতে হবে।
টাইফয়েড টিকা ভ্যাকসিন কার্ড সংগ্রহ
ইপিআই ওয়েবসাইট থেকে টাইফয়েড টিকার রেজিস্ট্রেশন কার্ড বা ভ্যাকসিন কার্ড ডাউনলোড করা যাবে। তার জন্য প্রথমে সাইটে লগইন করতে হবে। লগইন করার পর “টাইফয়েড টিকার ভ্যাকসিন কার্ড সংগ্রহ” বাটনে ক্লিক করলে পিডিএফ ডাউনলোড হয়ে যাবে।
এই কার্ডটি আগামি ১২ তারিখ নির্দিষ্ট টিকাদান সেন্টারে নিয়ে গেলেই টাইফয়েড টিকার ভ্যাকসিন নেওয়া যাবে।
টাইফয়েড জ্বরের লক্ষনসমূহ
- মৃদু জ্বর থেকে দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ মাত্রার জ্বর (১০৩-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট)
- ক্লান্তি, মাথা ব্যথা, কাঁপুনি, ক্ষুধামন্দা, ও কাশি শরীর ব্যথা, পেট ব্যথা (কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া থাকতে পারে বা না-ও থাকতে পারে), বমি বমি ভাব বা বমি
- অসুখের দ্বিতীয় সপ্তাহে যকৃৎ এবং প্লীহা বড় হয়ে যেতে পারে (Hepato-splenomegaly )
- কিছু রোগীর ক্ষেত্রে র্যাশ বা শরীরে লালচে দানা থাকতে পারে
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
টাইফয়েড টিকা কবে থেকে শুরু হবে ?
আগামী ১২ অক্টোবর, ২০২৫ হতে টাইফয়েড জ্বর প্রতিরোধে মাসব্যাপী সারাদেশে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন ২০২৫ সার্বিকভাবে পরিচালিত হবে। টাইফয়েড টিকা রেজিস্ট্রেশন করার নিয়ম জেনে আজই নিবন্ধন করুন, আপনার শিশুকে সুস্থ রাখুন।
টাইফয়েড টিকা দিতে কত টাকা লাগে ?
ক্যাম্পেইন চলাকালে প্রায় ৫ কোটি শিশুর প্রত্যেককে নিরাপদ ১ ডোজ টাইফয়েড টিকা বিনামূল্যে প্রদান করা হবে।
টাইফয়েড টিকা রেজিস্ট্রেশন করতে কত বছর হতে হবে ?
টিকাদান কার্যক্রম চলাকালে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত প্রাক-প্রাথমিক হতে ৯ম শ্রেণি/সমমান পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীদের স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বহির্ভূত ০৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী সকল শিশুদের বিদ্যমান ইপিআই টিকাদান কেন্দ্রে এই টাইফয়েড টিকা প্রদান করা হবে।
শিশুর বয়স ১৫ বছরের বয়স হলে কি টিকা পাবে না ?
যে সকল ছাত্র ছাত্রী প্রাক-প্রাথমিক থেকে ৯ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত কিন্তু বয়স ১৫ বছরের বেশি এবং ১৭ সংখ্যার ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন সনদ আছে তারাও ১ ডোজ টাইফয়েড টিকা পাবে। এজন্য সেই ছাত্র ছাত্রীদের জন্ম নিবন্ধন সনদের শুধু ১৭ সংখ্যা vaxepi@mis.dghs.gov.bd মেইলে স্কুল ই-মেইল থেকে পাঠাতে হবে অথবা সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য সহকারী বা টিকাদানকর্মীর নিকট জন্ম নিবন্ধনের ১৭ সংখ্যা প্রদান করতে হবে। এক্ষেত্রে স্কুলের শিক্ষকদের সাহায্য নিয়ে আবেদন করতে হবে।
বাংলাদেশে টাইফয়েড টিকার প্রয়োজনীয়তা কি ?
বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্তের হার বাংলাদেশে অনেক বেশি। The Global Burden of Disease-এর সমীক্ষা অনুযায়ী ২০২১ সালে বাংলাদেশে প্রায় ৪,৭৮,০০০ জন টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয় এবং ৮,০০০ জন মৃত্যুবরণ করে; যার মধ্যে ৬৮ শতাংশই শিশু। তাই এই টিকার ভ্যাকসিন নেওয়ার কোন বিকল্প নাই।
টিকা গ্রহণের পূর্বে ও পরে করণীয় ?
টিকা গ্রহণের পূর্বে সকালের নাস্তা খেয়ে আসতে হবে, অর্থাৎ খালি পেটে টিকা নেওয়া যাবে না। টিকা গ্রহণের পর অন্তত ৩০ মিনিট টিকাদান কেন্দ্রে বসে থাকতে হবে। মনে রাখবেন, এই টিকা নতুন হলেও অন্যান্য টিকার মতই সামান্য প্রতিক্রিয়া, যেমন- টিকা দেওয়ার স্থানে চামড়া লাল হওয়া, যাওয়া, সামান্য ব্যথা, অল্প জ্বর, মাথা ব্যথা, ক্লান্তি ভাব, এবং মাংসপেশিতে ব্যথা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে, যেগুলি এমনিতেই ভাল হয়ে যায়।
টাইফয়েড টিকা রেজিস্ট্রেশন কিভাবে করতে হয় ?
বাংলাদেশে টাইফয়েড টিকা রেজিস্ট্রেশন এখন অনালাইনেই করা যায় www.vaxepi.gov.bd/registration/tcv ওয়েবসাইটে। সেখানে গিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধনের তথ্য, ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার দিয়ে ফর্ম পূরণ করতে হয়। রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে একটি কনফার্মেশন বার্তা পাওয়া যায় এবং নির্ধারিত তারিখে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে টিকা নেওয়া যায়। বাংলাদেশ সরকার ১২ই অক্টোবর ২০২৫ থেকে সারা দেশে টাইফয়েড টিকা কার্যক্রম শুরু করছে, যা ২ বছর বা তার বেশি বয়সী সবার জন্য প্রযোজ্য।