ড্রাইভিং লাইসেন্স অনলাইন আবেদন করার নিয়ম 2025
আপনি কি ড্রাইভিং লাইসেন্স অনলাইন আবেদন সম্পর্কে জানতে চাইতেছেন ? আপনি সঠিক যায়গাতেই রয়েছেন। মাত্র পাচটি(০৫) ধাপ অনুসরণ করে সহজেই আবেদন করা যাবে যদি আপনার কাছে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র থাকে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স অতি প্রয়োজনীয় একটি ডকুমেন্টস যা কোন ব্যক্তির গাড়ি চালানোর পারদর্শিতা প্রমাণ করে। তবে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য অবশ্যই আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা প্রয়োজন। পূর্বে দীর্ঘ ভোগান্তির সম্মুখীন হলেও ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের ফলে বর্তমানে ড্রাইভিং লাইসেন্স অনলাইন আবেদন এর মাধ্যমে সম্পন্ন করা যায়। আজকের আমাদের আর্টিকেলের মাধ্যমে আজ আমরা আপনাকে ড্রাইভিং লাইসেন্স অনলাইন আবেদন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন সম্পৃক্ত সকল তথ্য জানাবো।
ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য আবেদন এর আগে জেনে নিন আবেদন করতে কত টাকা লাগে এবং লাইসেন্স করতে কি কি লাগে। সব কিছু জেনে নিয়ে আবেদন করতে বসলে সহজ হবে। তো চলুন শুরু করা যাক।
ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন ফরম ডাউনলোড
ড্রাইভিং লাইসেন্স এর আবেদন ফরম দুইটি একটি হচ্ছে লার্নার এর জন্য আবেদন ফরম এবং ২য় টি পেশাদার/ অপেশাদার এর জন্য আবেদন ফরম। আপনি চাইলে আবেদন ফরম এর মাধ্যমে আবেদন করতে পারেন আবার অনলাইনের মাধ্যমেও করতে পারেন। তবে অনলাইনের ফুল
এখান থেকে আবেদন ফরম ডাউনলোড করে সঠিকভাবে পুরন করুন এবং নির্দিষ্ট অফিসে গিয়ে জমা দিন। আবেদন গৃহীত হলে মোবাইলের মাধ্যমে পরিক্ষার ডেট জানিয়ে দেওয়া হবে। তারপর পরীক্ষায় পাশ করলে ড্রাইভিং লাইসেন্স স্ট্যাটাস চেক করতে পারবেন। তবে আপনি এ ঝামেলা এড়াতে চাইলে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে পারেন।
সময়ের সাথে বাংলাদেশের জনগণ সচেতনতা অবলম্বন করতে শুরু করেছে এবং ধীরে ধীরে বাংলাদেশের সড়ক আইন কঠোর হচ্ছে। এসকল আইনী সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রতি গাড়ি চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স অবশ্যই সাথে থাকা উচিত। তবে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য উক্ত নাগরিকের বেশ কিছু যোগ্যতা থাকা অত্যন্ত অ্যবশক।
ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য নাগরিকের যোগ্যতা
ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য অবশ্যই নাগরিকের বেশ কিছু যোগ্যতা থাকতে হবে যার ওপর নির্ভর করে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক উক্ত নাগরিক ড্রাইভিং লাইসেন্স লাভ করতে পারবেন। যোগ্যতা সম্পর্কে বিস্তারিত নিম্নরূপঃ
- ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারীর অবশ্যই ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণী পাস হতে হবে।
- আবেদনকারী নাগরিক শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে সুস্থ থাকতে হবে।
- আবেদনকারীর সর্বনিম্ন বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে।
- অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স হিসেবে নূন্যতম বয়স ১৮ বছর হতে হবে এবং পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স হিসেবে এর বয়স ন্যূনতম ২১ বছর হতে হবে।
লার্নার বা শিক্ষানবিস ড্রাইভিং লাইসেন্স হচ্ছে ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রধান পূর্ব শর্ত। অর্থাৎ উক্ত নাগরিককে অবশ্যই কারিগরি দিক থেকে অবশ্যই গাড়ি চালাতে পারদর্শী হতে হবে। এখন তবে, আমরা ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য অনলাইনে আবেদন করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা করি।
ড্রাইভিং লাইসেন্স অনলাইন আবেদন করার নিয়ম
ড্রাইভিং লাইসেন্স অনলাইন আবেদন করা বর্তমানে খুব সহজ। ঘরে বসে হাতে থাকা মোবাইল ফোন বা কম্পিউটারের মাধ্যমে খুব সহজেই ড্রাইভিং লাইসেন্স অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়। এক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হবে আবেদনকারীকে। নিম্নে সকল ধাপ সুবিন্যস্ত ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছেঃ
ধাপ ১: ওয়েবসাইটে প্রবেশ ও নিবন্ধন করণ
বিআরটিএ সেবা বাতায়ন এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট bsp.brta.gov.bd ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে। উপরের ডান পাশে থাকা “নিবন্ধন” বাটনে প্রেস করতে হবে।
“নিবন্ধন” বাটনে প্রেস করার পর পরবর্তী পেজে জন্ম তারিখ, জন্ম নিবন্ধন নম্বর ও সচল মোবাইল নম্বর প্রদান করে “অনুসন্ধান” বাটনে প্রেস করুন।
“অনুসন্ধান” বাটনে প্রেস করার পর পরবর্তী পেজে আপনার সকল তথ্য প্রদর্শিত হবে। নিচের দিকে স্ক্রোল করে বেশ কিছু তথ্য আপনাকে প্রদান করতে হবে সকল তথ্যের মধ্যে রয়েছে:
- সচল মোবাইল নম্বর।
- ই-মেইল ঠিকানা।
- পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।
- সকল তথ্য প্রদান করে আপনি “নিবন্ধন” বাটনে প্রেস করুন।
পরবর্তী পেজে আপনাকে দেখানো হবে আপনার অ্যাকাউন্টটি সফলভাবে তৈরি করা হয়েছে অনুগ্রহ করে ই-মেইল ঠিকানায় পাঠানোর লিংক এর মাধ্যমে আপনার অ্যাকাউন্টটি ভেরিফিকেশন করুন। আপনি আপনার ই-মেইল অ্যাকাউন্ট দিয়ে প্রবেশ করে ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করুন।
ধাপ ২ :ভেরিফিকেশন করণ ও অ্যাকাউন্ট লগ ইন
অ্যাকাউন্ট ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হলে আপনার অ্যাকাউন্ট ে লগইন করার জন্য আপনাকে আপনার মোবাইল নাম্বার ও পূর্বে ব্যবহার করা পাসওয়ার্ডটি ব্যবহার করুন। মোবাইল নম্বরটি ভেরিফিকেশন করার জন্য আপনার মোবাইল নম্বরে OTP কোড এ প্রেরণ করা হবে উক্ত কোড এখানে প্রদান করুন ও “ভেরিফাই” বাটনে প্রেস করুন।
অতঃপর পুনরায় লগইন আর তথ্য মোবাইল নম্বর ও পাসওয়ার্ডটটি ব্যবহার করে লগইন করুন।
ধাপ ৩ : ড্রাইভিং লাইসেন্স অনলাইন আবেদন
ড্রাইভিং লাইসেন্স অনলাইন আবেদনের জন্য আপনাকে যে সকল ধাপ অনশন করতে হবে তার মধ্যে রয়েছে:
- মেনুতে ক্লিক করে “শিক্ষানবিস ড্রাইভিং লাইসেন্স” বাটনে প্রেস করুন।
- বেশ কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করতে হবে এক্ষেত্রে কি কি কাগজপত্র বা নথিপত্র প্রয়োজন হবে তা নিম্নে ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট ধাপে উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে সত্য তথ্য ছাড়া অন্য কোন তথ্য প্রদান করলে ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল করা হবে।
- “আমি সম্মত” বাটনে প্রেস করুন।
- অতঃপর পরবর্তী পেজে প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্ট সংযোজনসহ অপ্রয়োজনীয় তথ্য সংযোজন করতে হবে। প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করার পর “সংরক্ষণ করুন‘ বাটনে প্রেস করতে হবে।
- “সংরক্ষণ করুন” বাটনে প্রেস করার পর পরবর্তী ধাপে আপনি আপনার তথ্য ও পুনরায় দেখতে পাবেন আপনার সকল তথ্য যদি সঠিক থাকে তাহলে আপনি ধাপে যাওয়ার জন্য “অনলাইন ফি জমা”বাটনে প্রেস করুন।
- পরবর্তী পেজে ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রকারভেদে ফি প্রদান করতে হবে। তবে ড্রাইভিং লাইসেন্সের পেমেন্টের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে অনলাইনে অর্থ প্রদান করতে পারবেন। এক্ষেত্রে পেমেন্ট অপশন সিলেক্ট করে আপনি উপরোক্ত শর্তাবলিতে সম্মত আছেন টিক মার্ক করে “নিশ্চিত” বাটনে ক্লিক করুন।
- পেমেন্ট প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর আপনি লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স ডকুমেন্ট ও পেমেন্টের রসিদ পেয়ে যাবেন উক্ত ২টি তথ্য অবশ্যই সতর্কতার সহিত ডাউনলোড ও প্রিন্ট করে রাখতে হবে
পরবর্তীতে ড্রাইভিং লাইসেন্সের টেস্ট বা পরীক্ষায় এই ২ টি ডকুমেন্টের প্রয়োজন হবে। জেনে নিন ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে যা যা লাগে
ড্রাইভিং লাইসেন্স অনলাইন আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
ড্রাইভিং লাইসেন্স অনলাইন আবেদনের জন্য বেশ কিছু প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন হয়। যেমন:
- আবেদনকারীর ছবি, ছবি রাখার অবশ্যই ৩০০ x ৩০০ পিক্সেল হতে হবে (ছবি আকার সর্বোচ্চ ১৫০ কেবি হতে হবে)।
- আবেদনকারী শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে সুস্থ রয়েছেন এই মর্মে রেজিস্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে (অবশ্যই সার্টিফিকেটের আকার সর্বোচ্চ ৬০০ কেবির মধ্যে হতে হবে)। এক্ষেত্রে বিআরটিএ এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে মেডিকেল সার্টিফিকেটের নথিপত্র সংগ্রহ করতে হবে।
- জাতীয় পরিচয় পত্রের স্ক্যান কপি (অবশ্যই জাতীয় পরিচয় পত্রের দুই অংশের স্ক্যান কপি)। জাতীয় পরিচয়পত্রের স্ক্যান কপির সর্বোচ্চ আকার ৬০০ কেবির মধ্যে হতে হবে।
- ইউটিলিটি বিল এর স্ক্যান কপি প্রদান করতে হবে। অবশ্যই ইউটিলিটি বিলের স্ক্যান কপির আকার সর্বোচ্চ ৬০০ কেবির মধ্যে হতে হবে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স অনলাইন আবেদন এর ফি
ড্রাইভিং লাইসেন্স অনলাইন আবেদনের শিক্ষানবিস ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য নির্ধারিত ফ্রি প্রদান করতে হবে। সাধারণত ক্যাটাগরির উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত ফি এর ভিন্নতা লক্ষ্য করা যা। যেমন:
- ক্যাটাগরি ১: ৫১৮ টাকা।
- ক্যাটেগরি ২ : ৭৪৮ টাকা।
অবশ্যই উক্ত নির্ধারিত ফি অনলাইনে পরিশোধ করতে হবে।
সংক্ষেপে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির প্রক্রিয়া
ড্রাইভিং লাইসেন্স অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করার পর আপনি যে লার্নার বা শিক্ষানবিশিয়ার ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়েছেন এটি ব্যবহার ২ মাস থেকে ৩ মাস প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার পর BRTA এর নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে কেন্দ্রে লিখিত মৌখিক ও ফিল্ম টেস্টের মাধ্যমে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। উক্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নাগরিক স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য উপযুক্ত হিসেবে বিবেচিত হবেন।
স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য বেশ কিছু কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়ে থাকে। যেমন:
- বিআইটিএ থেকে নতুন একটি ফরম সংগ্রহ করতে হবে এবং ফরমে সকল তথ্য সুস্পষ্ট ভাবে প্রদান করতে হবে।
- রেজিস্টার ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে ( নাগরিক শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে সুস্থ আছেন এই মর্মে)।
- জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি।
- BRTA নির্ধারিত ব্যাংকে নির্ধারিত ফি জমাদানের রসিদ।
- পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের সার্টিফিকেট বা পুলিশি তদন্ত প্রতিবেদন।
- সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের একটি রঙিন ছবি।
পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য অবশ্যই উক্ত নাগরিকের বা আবেদনকারীর বয়স কমপক্ষে ২১ বছর হতে হবে। পক্ষান্তরে অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য উক্ত নাগরিকের বা আবেদনকারীর বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স অনলাইন আবেদন সম্পর্কিত বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন সমূহ
(১) ড্রাইভিং লাইসেন্স কত প্রকার?
বাংলাদেশে ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রকারভেদে ৫ ধরনের ড্রাইভিং লাইসেন্স হয়ে থাকে। যেমন: শিক্ষানবিস ড্রাইভিং লাইসেন্স, পিএসভি ড্রাইভিং লাইসেন্স,ইন্সট্রাক্টর ড্রাইভিং লাইসেন্স,অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স, পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স।
(২) ড্রাইভিং লাইসেন্স অনলাইন আবেদন ফি কত টাকা?
ড্রাইভিং লাইসেন্সের অনলাইন আবেদন ফি পার্থক্য ভেদে দুই ধরনের হয়ে থাকে। যেমন: ৫১৮ টাকা ও ৭৪৮ টাকা (শিক্ষানবিস ড্রাইভিং লাইসেন্স)
(৩) ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে কত টাকা লাগে?
মেয়াদের উপর নির্ভর করে ড্রাইভিং লাইসেন্সের অর্থের পরিমাণ এর ভিন্নতা দেখা যায় যেমন: পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স পাঁচ মেয়াদের জন্য ২৭৭২ টাকা শ্রী প্রদান করতে হয়। অন্যদিকে অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ১০ বছরের জন্য ৪৪৯৭ টাকা প্রদান করতে হয় নির্ধারিত ফি হিসেবে।