অনলাইনে ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার নিয়ম 2025
সামনেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন, তাই এই নির্বাচনকে সামনে রেখে আপনার কাঙ্ক্ষিত ভোটটি নিজের এলাকায় দিতে চান ? তবে আজই অনলাইনে ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার নিয়ম জেনে নিয়ে নিজের কাজ নিজে সম্পন্ন করুন।
ভোটার এলাকা পরিবর্তন ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে এবং এখন আর নিকটস্থ নির্বাচন কমিশন অফিসে জেতে হয় না। নিজের ইউনিয়ন পরিষদ থেকেই ভোটার এলাকা পরিবর্তন করা যায়। সম্পূর্ণ বিষয়টি ধাপে ধাপে দেখানো হয়েছে। চ্যাট জিপিটি কিংবা অনেকেই বলে অনলাইনে এটা করা যায় না, আসলে কথাটা সম্পূর্ণ সত্য নয়।
ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার নিয়ম
ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার জন্য মাত্র ০৫টি ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন পরবে। এই ডকুমেন্টস গুলো নিয়ে নিকটস্থ ইউনিয়ন পরিষদে গেলেই অনলাইনে আবেদন করে দিবে। তবে ঝামেলা বিহীন সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে অনলাইনের বিকল্প নেই।
প্রথমেই বলা হয়েছে সর্বমোট ০৫ টি কাগজের প্রয়োজন হবে ভোটার এলাকা পরিবর্তনের জন্য। গুরুত্বপূর্ণ এই কাগজগুলো আগে থেকে হাতে থাকলে ৫-১০ মিনিটের মধ্যেই আবেদন সম্পন্ন করা যাবে। কাগজগুলো হলঃ
- চেয়ারম্যান এর প্রত্যয়ন পত্র
- ইউটিলিটি বিলের কপি
- ১৩ নম্বর ফরম
- জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি এবং
- যে এলাকায় যেতে ইচ্ছুক সেই এলাকার নাগরিক সনদপত্র
এই কাগজগুলো সাথে থাকলে আবেদন প্রক্রিয়া সহজ হয়ে যাবে। অনলাইনের মাধ্যমেই এই ফরমগুলো সংগ্রহ করা যায় যেটা অনেকেই জানেন না।
অনলাইনে ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার নিয়ম
নতুন নিয়ম অনুসারে প্রথমে nidw.gov.bd এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। তারপর ১৩ নম্বর ফরম ডাউনলোড করতে হবে। অনলাইন থেকে প্রত্যয়নপত্র এবং নাগরিক সনদপত্র সংগ্রহ করতে হবে (যদি না থাকে)। তারপর বাসার বিদ্যুৎ বিল/ গ্যাস বিল এর কপি দিয়ে আবেদন করতে হবে। আবেদনের ৫-৭ কর্ম দিবসের মধ্যে ভোটার এলাকা পরিবর্তন হয়ে যাবে।
এক্ষেত্রে নতুন ভোটার আইডি কার্ড পাবেন না। নতুন আইডি কার্ড সংগ্রহ করতে হলে অনলাইনে নির্দিষ্ট পরিমান টাকা জমা দিয়ে আবেদন করা লাগবে।
ধাপ-১: NIDW BD ওয়েবসাইট থেকে ফরম ডাউনলোড করুন
প্রথমে nidw.gov.bd ওয়েবসাইট এ প্রবেশ করে ওপরের মেনু বার থেকে Download বাটনে ক্লিক করতে হবে। সেখান থেকে ৪ নম্নর ফরম অর্থাৎ ভোটার এলাকা পরিবর্তন ফরম সংগ্রহ করতে হবে। তবে আপনাদের সুবিধার জন্য ফরমটি এখানেই দিয়ে দেওয়া হল।
ফরমটি দেখতে নিচের ছবির মত হবে। এখানে কোথায় কি কি পুরন করতে হবে সেটি বলতে গেলে পোস্টটি বড় হয়ে যাবে যদিও। তবুও সবার কথা চিন্তা করে বিস্তারিত বলার চেষ্টা করছি, যাতে ফরম পুরন নিয়ে কার কোন সমসসা না হয়।
প্রাথমিক কিছু তথ্য পুরন করতে সমস্যা হবে না আসা করি। যেমন আবেদনকারির নাম, জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর ইত্যাদি। তবে এক্ষেত্রে ১০ সংখ্যার ডিজিটাল স্মার্ট কার্ড নম্বর দেওয়া ভাল। তবে আপনার যদি ১৭ সংখ্যার সেই আগের আইডি কার্ড থাকে, আপনি চাইলেই আইডি কার্ডের ১৭ সংখ্যা থেকে ১০ সংখ্যায় পরিবতন করার নিয়ম জেনে নিতে পারেন।
বর্তমান তালিকাভুক্তি সংক্রান্ত তথ্য
এখানে অনেকেই বুঝতে পারেন না কি করবেন। কেননা এখানে ভোটার নম্বর লাগে এবং সেই সাথে ভোটার এলাকার নাম ও নম্বর এর তথ্য প্রয়োজন হয়। অনালাইনেই এসব বের করা যায় খুব সহজেই।
জেনে নিনঃ অনলাইনে ভোটার নম্বর বের করার নিয়ম
আর ভোটার এলাকার নম্বর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জেনে নিতে হবে কেননা এটা নিরভর করে আপনি কোন এলাকার ভোটার ছিলেন। বর্তমানে যে এলাকার ভোটার আছেন সেই এলাকার ভোটার এলাকা নম্বর সংগ্রহ করে নিবেন।
অনলাইনে ভোটার এলাকা পরিবর্তনের জন্য এবার নিজের বর্তমান থানা, জেলা, গ্রাম, বাসা কিংবা হোল্ডিং নম্বর দিয়ে এই ধাপটি সম্পন্ন করুন।
স্থানান্তরিত এলাকার তথ্য
একইভাবে যে এলাকায় আপনার ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে চান সেই এলাকার জেলা, থানা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড নম্বর, গ্রাম এবং বাসার নম্বর পুরন করতে হবে। এছাড়াও একটি সচল মোবাইল নম্বর প্রদান করতে হবে। তারপর ডাকঘর এবং পোস্ট কোড এর তথ্য দিয়ে পরের বিষয় সমূহ পুরন করে নিতে হবে।
স্থানান্তরের কারন উল্লেখ
এখন যে এলাকায় আছেন সেই এলাকায় কত বছর যাবত আছেন সেই তথ্য দিয়ে কেন ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে চান সেটা উল্লেখ করুন। এক্ষেত্রে “নিজ পৈত্রিক ভিটায় বসত করার জন্য” লিখতে পারেন। আর যদি আপনি মহিলা হন এবং স্বামীর এলাকায় স্থানান্তরিত হতে চান তবে লিখতে পারেন “স্বামীর এলাকায় বসবাস করার জন্য“
একইভাবে বাকি তথ্যগুলো দিয়ে ফরম পুরন সম্পন্ন করুন। এক্ষেত্রে [কেবলমাত্র অফিসে ব্যাবহারের জন্য] এই অংশের কোন কিছুতে লিখবেন না, সতর্ক থাকতে হবে। সর্বশেষ প্রাপ্তিস্বীকার পত্র তথ্য দিলেই ফর্ম পুরন সম্পন্ন হয়ে গেল এরপর পরের ধাপের পালা।
ধাপ-২: প্রত্যয়ন পত্র ডাউনলোড করুন
এবার অনলাইনে প্রত্যয়ন পত্র ডাউনলোড করার পালা।চেয়ারম্যান এর থেকে নিলেও হয়ে যাবে। তবে যেহেতু অনলাইনে সব কিছু করবেন তাই আমি দেখিয়ে দিচ্ছি সবকিছু।
- প্রথমে prottoyon.gov.bd ওয়েবসাইট এ প্রবেশ করতে হবে
- ভোটার এলাকা পরিবর্তন প্রত্যয়ন ডাউনলোড করতে হবে
প্রথমে ওপরের লিঙ্কে চলে যাবেন। তারপর একটু নিচে গেলেই প্রত্যয়ন পত্র ডাউনলোড ফরম পেয়ে যাবেন। সেখানে আগে থেকে লগইন থাকলে লগইন করবেন অথবা অ্যাকাউন্ট না থাকলে রেজিস্ট্রেশন করে নিবেন।
এই প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহের আবেদন করতে হলে কিছু কাগজ পত্রের প্রয়োজন হবে। ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার জন্য যে প্রত্যয়ন দরকার পড়ে সেটি সংগ্রহ করার নিয়ম জেনে নিতে নিচের ছবিটি লক্ষ্য করুন।
আবেদন ফি মাত্র ৪০ টাকা। এই টাকা Bkash, Nogod, Rocket কিংবা অন্য যেকোনো ব্যাংক এ পরিশোধ করা যাবে। আবেদন সম্পন্ন করার পর গৃহীত হলে ২-৩ কর্ম দিবসের মধ্যেই প্রত্যয়ন পত্র ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।
জেনে নিনঃ নতুন আইডি কার্ড করতে কি কি লাগে
ধাপ-৩ নাগরিক সনদ ডাউনলোড
এরপর নাগরিক সনদ ডাউনলোড করে নিতে হবে আগের নিয়মেই। আগের মত সেইম প্রত্যয়ন পত্রের ওয়েবসাইট থেকে নাগরিক সনদ ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। নিচের ছবিটি খেয়াল করুন।
ধাপ-৪ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমাদান
সব কাগজপত্র অনলাইন থেকে গুছানো সম্পন্ন হয়ে গেলে এবার সশরীরে নিকটস্থ ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে জমা দিতে হবে। সাথে নিজের বর্তমান আইডি কার্ড এর এক কপি ফটোকপি নিতে ভুলবেন না। তবে অনেক ইউনিয়ন পরিষদে এসব কাগজের সাথে অতিরিক্ত হিসাবে অনাপত্তি পত্র লাগতে পারে।
আবেদন করার ৫-৭ দিনের মধ্যে আপনার মোবাইল নাম্বারে ম্যাসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে ১০৫ নম্বর থেকে ২ টি মেসেজ পাবেন।
তবে এই নিয়ে অনেকের মনে অনেক রকমের প্রশ্ন কাজ করে থাকে। তাই বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এরপরও যদি কোন কিছু জানার থাকে তবে কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না।
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নোত্তর
১। ভোটার আইডি কার্ড ট্রান্সফার করার নিয়ম কী ?
ভোটার আইডি ট্রান্সফার করার জন্য আপনাকে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের ফরম (Form-13) পূরণ করতে হবে এবং যথাযথ কাগজপত্র সহ নির্বাচন কমিশন অফিসে জমা দিতে হবে। এটি অনলাইনে NID ওয়েবসাইট থেকে করা যায়।
২। ভোটার এলাকা পরিবর্তনের জন্য ফি কত?
ভোটার এলাকা পরিবর্তনের জন্য সাধারণত কোনো ফি নেওয়া হয় না। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে ন্যূনতম প্রসেসিং ফি ধার্য হতে পারে।
৩। ভোটার এলাকা পরিবর্তনের ফরম ১৩ pdf download
Form 13 বা ভোটার এলাকা পরিবর্তনের ফরম NID ওয়েবসাইট থেকে PDF আকারে ডাউনলোড করা যায় অথবা স্থানীয় নির্বাচন অফিস থেকেও সংগ্রহ করা যায়। অথবা NIDWBD.com ওয়েবসাইট থেকেই সংগ্রহ করতে পারবেন।
৪। ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে কতদিন সময় লাগে?
সাধারণত ১৫ থেকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ভোটার এলাকা পরিবর্তনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।